পেকুয়ায় যৌতুকের বলি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা

 এম.জুবাইদ, পেকুয়া |  Friday, June 25th, 2021 |  10:44 pm

কক্সবাজারের পেকুয়ায় যৌতুকের টাকার জন্য তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পাষন্ড স্বামীর বিরুদ্ধে।

(২৪ জুন) বৃহষ্পতিবার দিনগত রাতে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের নতুনঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মর্জিনা আক্তার (২০) নতুনঘোনা এলাকার দিদারুল ইসলামের স্ত্রী।

শুক্রবার ভোররাতে পেকুয়া থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। সকাল ১১ টার দিকে স্বামী দিদারুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। দিদার নতুনঘোনা এলাকার মানুনুল হকের ছেলে।

নিহতের পিতা আশরাফ আলী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বামীকে নিয়ে শ্বাশুরবাড়িতে চলে যায় মর্জিনা। তিনদিন আগে মর্জিনা বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে। রাত ১২টার দিকে মেয়ের জামাই দিদার মর্জিনা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ছে বলে মুঠোফোনে কল করে। উজানটিয়ায় গিয়ে দেখি আমার মেয়ের নিথর দেহ। গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। নাক দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েকে গলাটিপে হত্যা করেছে।

মর্জিনার মা শফিকা বেগম জানায়, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে যৌতুকের জন্য মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন চালাতো স্বামী ও শ্বাশুরী। মেয়ের সুখের জন্য কয়েকদফা টাকাও দিয়েছি। কয়েক মাস আগে মেয়েকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। স্থানীয়ভাবে বৈঠকও হয়েছে অনেকবার। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বামী ও পনের মাস বয়সী লাবিবকে নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে গেছে। এ সময় দিদার ত্রিশ হাজার টাকা দাবী করছে। টাকা না দেয়ায় রাতে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে।

দিদারুল ইসলামের জেঠা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন,মর্জিনা অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে একজন পল্লী চিকিৎসককে নিয়ে যাই। চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানায়। দিদারের মা মর্জিনার বুকে ব্যাথা উঠেছে বলে জানিয়েছেন। মর্জিনার স্বজন গিয়াস উদ্দিন বলেন, অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে মর্জিনার পিতার সাথে আমিও যাই। গিয়ে দেখি মর্জিনার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তাকে নিশ্চিত মেরে ফেলা হয়েছে। দিদারের মা শাহেনা বেগম বলেন, আমি অসুস্থ। ডায়াবেটিস ডাক্তার দেখিয়ে রাত ৯টার দিকে বাড়িতে ফিরি। ছেলে আলাদা সংসার করে। পাশের বাড়িতে তারা থাকে। হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে বাড়িতে গিয়ে দেখি মর্জিনাকে কাঁধে নিয়ে দিদার কান্নাকাটি করছে। মর্জিনা বুকে ব্যাথা লাগছে বলে ছেলে কাঁধে ঢলে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, যৌতুকের জন্য কোন সময় নির্যাতন করা হয়নি। আমার বৌ মা অনেক ভাল মেয়ে। বিকেলে ফোনে আমার সাথে কথাও বলেছে।

পল্লী চিকিৎসক আব্দুল আলিম জানায়,রাতে আমি গিয়েছিলাম। মেয়েটি এর আগে মারা গেছে। দিদারুল ইসলাম বলেন, রাতে হঠাৎ মর্জিনার বুকে ব্যাথা উঠে। বুকের ব্যাথায় ছটফট করেছে। ইশারায় ছেলেকে দেখিয়ে দিয়ে আমার কাঁধে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কোন সময় যৌতুকের জন্য নির্যাতন করিনি। তিনদিন আগে বাপের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। আমি গিয়ে বিকেলে নিয়ে আসি।

পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কানন সরকার জানায়, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো লিখিত এজাহার দেয়নি। স্বামী পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

জানাগেছে, আড়াই বছর আগে দিদারের সাথে বিয়ে হয় রাজাখালী ইউনিয়নের রব্বত আলী পাড়ার আশরাফ আলীর মেয়ে মর্জিনা আক্তারের সাথে। তাদের সংসারে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ লাবিব নামের পনের মাস বয়সী শিশু ছেলে রয়েছে।