বাংলাদেশের সংবিধান এখনো জিয়া-এরশাদের প্রেতাত্মা থেকে মুক্ত হতে পারেনি মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানি সংবিধানের আদলে সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করেছে। একই ধারায় জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করে সংবিধানে সংযুক্ত করার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকীকরণ করেছে। এর লক্ষ্য একটাই, পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশেও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিনত করা। আজকে ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার এসেছে কিন্তু জিয়াউর রহমান ও এরশাদের প্রেতাত্মা থেকে এখনো বাংলাদেশের সংবিধান মুক্ত হতে পারেনি। দেশের বিদ্যমান সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা যেমন আছে, তেমন ধর্মতন্ত্রও আছে। রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে পাকিস্তানি আদলের মতো ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পেিরনত করার চক্রান্তগুলো করেছে। কিন্তু সংখ্যালঘু হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা কেউ মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এই বাংলাদেশের সবার রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতি পরতে পরতে সকল বাঙালির অধিকার সমান।
গতকাল শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পুরাতন নগর ভবনের কে.বি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রানা দাশগুপ্ত বলেন, সবার সম্মিলিত রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তখন প্রশ্ন ছিল না কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ আর কে মুসলমান সে পরিচয় সামনে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গণে আমরা তো একথালায় বসে একসাথে ভাত খেয়েছি। আমরা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরা মনে করি ধর্ম আমাদের যার যার আমাদের পবিত্র ব্যক্তিগত বিশ্বাস। কিন্তু আমাদের প্রথম ও প্রধান পরিচয় আমরা মানুষ।
হিন্দু সমাজকল্যান পরিষদের উদ্যোগে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে অসহায় মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পরিষদের উপদেষ্ঠা সাংবাদিক প্রীতম দাশ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখনো দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। সিরিজ বোমা হামলা, পেট্রোল বোমা হামলা তাদেরই অপতৎপরতা। এখন দেশের সিরিজ ধর্ষন-নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার পেছনেও কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা জরুরি। তিনি বলেন, এ দেশের সংখ্যালঘুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ভূমিদস্যুতার শিকার হচ্ছেন। এসব ধর্ষন-নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীরা যদি সরকার দলীয় কোন নেতাকর্মীও হয়, তাদের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, পরিষদের হাটহাজারীর সাধারণ সম্পাদক ডা. অশোক দেব, সাংবাদিক রূমন ভট্টাচার্য, নারী নেত্রী রুমকি সেনগুপ্ত, উজ্জ্বল চক্রবর্তী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা হিন্দু সমাজকল্যান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উদ্বোধন ঘোষণা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।